স্বপ্নের নতুন বাড়ি কিংবা ভবিষ্যত উজ্জ্বল করার জন্য স্বপ্নের দোকান যা-ই হোক না কেনো বিদ্যুৎ ছাড়া চলা অসম্ভব। তাই কিভাবে বিদ্যুতের জন্য আবেদন করবেন তা জানা খুবই জরুরী। অনেকেই তা না বুঝার কারণে বিভিন্নভাবে প্রতারণার সম্মুখীন হন, এই সমস্যা দূরীকরণের জন্য আমরা আজ আলোচনা করব পল্লী বিদ্যুৎ মিটার অনলাইনে আবেদন করার পদ্ধতি নিয়ে।
চলুন আলোচনা করা যাক কিভাবে পল্লী বিদ্যুৎ মিটারের জন্য আবেদন করবেন।
পল্লী বিদ্যুৎ মিটার অনলাইন আবেদন

পল্লী বিদ্যুৎ মিটার অনলাইন আবেদন 2025
পল্লী বিদ্যুৎ মিটার আবেদনের জন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বেশ কিছু শর্ত প্রদান করে থাকেন।
এবং আবেদনের জন্য নির্দিষ্ট কিছু ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন পড়ে। শুরুতে উক্ত ডকুমেন্টগুলো সংগ্রহ করুন এবং মোবাইল অথবা কম্পিউটারে তা ডকুমেন্টস আকারে সেভ করে রাখুন তারপর আবেদন করুন। আবেদনের জন্য প্রতি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন।
পল্লী বিদ্যুৎ মিটারের আবেদন ফি
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে মিটারের আবেদনের জন্য ১১৫ টাকা আবেদন ফি। আপনি চাইলে বিকাশ/রকেট অথবা সরাসরি বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে আবেদন ফি জমা দিতে পারেন।
পল্লী বিদ্যুৎ মিটার আবেদন করতে কি কি লাগে?
জেনে নিন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে। পল্লী বিদ্যুৎ মিটারের জন্য অনলাইনে অথবা অফলাইনে আবেদন করতে হলে আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু কাগজপত্র এবং শর্ত মানতে হবে – নিন্মে আমরা উক্ত ডকুমেন্টস সম্পর্কে আলোচনা করলাম।
- আবেদনকারীর নাম এবং তার সক্রিয় একটি মোবাইল নাম্বার এবং অবশ্যই তার জাতীয় পরিচয় পত্র।
- সংযোগস্থলে জমির মালিকানার তথ্য এবং খতিয়ান নাম্বার এবং দাগ নাম্বার দিতে হবে এছাড়া প্রমাণ হিসেবে দলিল অথবা খারিজ স্ক্যান কপি সংযুক্ত করতে হতে পারে।
- আবেদনকারীর সংযোগস্থলের ঠিকানা দিতে হবে।
- সার্ভিস পিলারের থেকে বাসার দূরত্ব 130 ফুট কিংবা তার কম হতে হবে।
- যেই পিলার হতে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে চান সেই পিলারের অধীনে আপনার পার্শ্ববর্তী গ্রাহকের হিসাব নং এবং বই নং সংগ্রহ করে রাখুন।
- আপনার বাসার ডিভাইস গুলোর উপর ভিত্তি করে লোডের হিসাব করা হবে। যেমন:- আপনার বাসার মোবাইল,টিভি,ফ্রিজ,ফ্যান, লাইট ইত্যাদি। কিন্তু বিলের হিসাব আসবে আপনার ব্যবহারের উপর নির্ভর করে।
- গ্রাউন্ড রডের ক্যাশ-মেমোর স্ক্যান করা ছবি কপি সংগ্রহ করুন যেটি আপনার হাউজ ওয়ারিং নিশ্চিত প্রমাণ করার জন্য দরকার হবে।
পল্লী বিদ্যুৎ মিটার আবেদনের শর্ত
- পল্লী বিদ্যুৎ মিটারের আবেদনের জন্য বেশ কিছু শর্তাবলী পালন করতে হয়। আপনারা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ওয়েবসাইটে গেলে উক্ত শর্ত গুলো দেখতে পাবেন। আপনাদের সুবিধার্থে আমরা উক্ত শর্ত গুলো নিম্মে উল্লেখ করে দিলাম।
- আবেদনকারী ছবি, আবেদনকারী জাতীয় পরিচয় পত্র, আবেদনের সময় উল্লেখ করতে হবে।
- উক্ত সংযোগস্থলের মালিকানা প্রমাণ করার জন্য জমির খারিজ বা দলিল স্ক্যান করে তা সংযুক্ত করতে হবে।
- লোড যদি 80 কিলোওয়াট এর বেশি হয় তাহলে এইচটি সংযোগ নিয়মগুলি প্রযোজ্য হবে।
- সার্ভিস ড্রপের দূরত্ব ১৩০ ফুটের মধ্যে হতে হবে। সার্ভিস ড্রপ হলো বৈদ্যুতিক খাম্বা থেকে আপনার বাসার দূরত্ব।
- সার্ভিস ড্রপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ সার্ভিস ড্রপের উপর তারের দৈর্ঘ্য কম বা বেশি হতে পারে। সঠিক তথ্য না দিলে সার্ভিস পেতে সমস্যা হতে পারে।
- অনলাইনে সমিতি কর্তৃক সার্ভে করার প্রয়োজনীয় অর্থ আবেদন ফ্রি, নিরাপত্তা ফি জামানত ফি, মেম্বারশীপ ফি এর নির্দেশনা এসএমএস এর মাধ্যমে জানানো হবে।
- এসএমএস পেতে হলে একটি সক্রিয় মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করবেন।
- আবেদন ফরমের লাল মার্ক করা অংশগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে।
অনলাইনে মিটারের আবেদন
উপরে উল্লেখিত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এবং শর্তসাপেক্ষে আপনাকে পল্লী বিদ্যুৎ মিটার অনলাইন আবেদন করতে হবে চলুন ধাপে ধাপে আমরা জেনে নেই পল্লী বিদ্যুৎ মিটারের জন্য আবেদনের নিয়ম।
প্রথম ধাপ:-ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি হতে নতুন সংযোগ নেওয়ার জন্য প্রথমেই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট যেতে হবে।
এখানে> www.rebpbs.com
এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন। তারপর আবেদনের পেজটি আসবে।
দ্বিতীয় ধাপ:- আবেদনকারী তথ্য প্রদান
- এই পেইজে আপনারা “আবেদন করুন” লেখাটি দেখতে পাবেন। এখানে ক্লিক করলে আপনার সামনে একটি ফর্ম চলে আসবে। এই ফর্মে লাল রঙের চিহ্নিত অংশগুলো (*) দেওয়া তথ্য গুলো বাধ্যতামূলকভাবে পূরণ করতে হবে।
- প্রথমে তালিকা হতে আপনার এলাকা অনুযায়ী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও জোনাল অফিস সিলেক্ট করুন।
- একক বাড়ির জন্য সংযোগের ট্যারিফ হিসেবে এলটি-এ সিলেক্ট করতে হবে। যদি বহুতল ভবন হয়ে থাকে তাহলে এমটি-এ সিলেক্ট করতে হবে।
- তারপর আবেদনকারীর স্থানে আপনার ব্যক্তিগত ডাটা প্রদান করুন। (*) চিহ্নিত অংশগুলোতে তথ্য প্রদান বাধ্যতামূলক এবং যেখানে ইংরেজিতে লিখতে বলা হবে সেখানে ইংরেজিতে লিখুন। এসব সত্য না মানলে আবেদন বাতিল বলে গণনা করা হবে।
- ব্যক্তিগত ডাটা যেখানে প্রদান করবেন তারমধ্যে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর,জন্ম তারিখ,ই-মেইল মোবাইল নম্বর,পাসপোর্ট নম্বর,ফোন নম্বর টিআইএন নম্বর ইত্যাদি তথ্যগুলো দিতে হবে।
তৃতীয় ধাপ:-স্থায়ী ঠিকানা ও প্রস্তাবিত সংযোগস্থলের সঠিক বিবরণ
- এই ধাপটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে আবেদনকারীর আইডি কার্ড অনুযায়ী স্থায়ী ঠিকানাটি পূরণ করুন(অবশ্যই ID কার্ড অনুযায়ী দিবেন)।
- যেখানে সংযোগস্থল নিতে চান,সে তথ্যের বিবরণ প্রস্তাবিত সংযোগ স্থলের বিবরণ এর জায়গায় দিতে হবে।এক্ষেত্রে আপনি যেই জায়গা অনুযায়ী নামজারি অথবা দলিলের কপি সংযুক্ত করবেন, সংযোগস্থলের ঠিকানাও সেই অনুযায়ী হতে হবে।
চতুর্থ ধাপ:-জিওগ্রাফিক,কানেকশন,লোড এবং চাহিদাকৃত লোডের সঠিক তথ্যপূরণ
আপনার নিকটবর্তী সার্ভিসপোল হতে সংযোগস্থলের দূরত্ব সঠিকভাবে মেপে নিন এবং সে অনুযায়ী জিওগ্রাফিক তথ্য প্রদান করুন।যদি মাপ ভুল হয় তাহলে কেবল অথবা তারের সংযোগ পেতে সমস্যায় পড়তে হবে।
একই পিলারের আওতায় পার্শ্ববর্তী গ্রাহকের বই নং,হিসাব নং,মিটার নম্বর এবং পোল নম্বর পূরণ করতে হবে(ইংরেজিতে পূরণ করবেন)।এরপর স্থায়ী নাকি অস্থায়ী তা নির্ধারণ করুন।
এই অংশে আপনার বাসায় কোন কোন ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র গুলো ব্যবহার করা হবে তার সংখ্যা বলুন।
পঞ্চম ধাপ:-ডকুমেন্টস আপলোড এবং সম্মতি প্রদান
এখানে আপনার যেই তথ্যগুলো দিতে হবে তা নিচে দিয়ে দিলাম।
- আপনার ছবি
- জাতীয় পরিচয়পত্র এবং
- খারিজ
তথ্যগুলো সাবমিট করার আগে সঠিক সাইজ করে নিন।
এটা খুবই সহজ এখানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কিছু শর্ত দিবে আপনি ওই শর্তগুলোর সাথে একমত কিনা তাতে টিক মার্ক দিয়ে দিবেন।
সবশেষে একটি ক্যাপচা কোড পূরণ করতে বলা হবে।সেটি পূরণ করে “সংরক্ষণ করুন” বাটনে ক্লিক করুন।
আবেদনপত্র প্রিন্ট
সংরক্ষণ বাটনে ক্লিক করার পর একটি ট্রাকিং নাম্বার পাবেন এবং একটি পিন নাম্বার পাবেন উক্ত তথ্যগুলো সংরক্ষণ করে রাখুন। সংরক্ষণ করার কারণ হলো পরবর্তীতে আবেদন সংক্রান্ত কোন তথ্য জানার জন্য আপনাকে এই ট্রেকিং নম্বর এবং পিন নম্বর ব্যবহার করতে হবে।
তারপর আবেদন ফরমটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিন
হাউজ ওয়্যারিং নিশ্চিত করুন
এই পর্যায়ে আপনাকে আপনার বাসায় হাউজ ওয়্যারিং সম্পূর্ণ হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।এজন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস হল
- গ্রাউন্ড রড ক্রয়ের মেমো বা রশিদ
- ট্যাকিং নম্বর
- পিন নম্বর
এরপর ওয়েবসাইটের হোম পেজ এ গিয়ে মেনুবার থেকে হাউস ওয়্যারিং নিশ্চিত করুন এই লিংকে ক্লিক করতে হবে।লিংকে প্রবেশের পর ট্যাকিং নম্বর এবং পিন নম্বর দিতে বলবে।সঠিকভাবে পূরণ করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন।
সাবমিট অপশনে ক্লিক করার পর,হাউজ ওয়্যারিং নিশ্চিতের তথ্য চাইবে।”হাউজ ওয়্যারিং নিশ্চিত হয়েছে” এখানে সিলেক্ট করুন এবং গ্রাউন্ড রড কিনার মেমো বা রশিদের নাম্বারটি ইংরেজিতে লিখুন।
সবশেষে রশিদ বা মেমোটি আপলোড করুন এবং বাড়ির ঠিকানা লিখুন।এ পর্যায়ে একটি ক্যাপচা কোড পূরণ করতে বলবে।কোডটি পূরণ করে সম্পূর্ণ বাটনে ক্লিক করুন।সঠিকভাবে পূরণ করলে হাউজ ওয়ারিং নিশ্চিত এমন একটি মেসেজ দেখাবে।
আবেদনের সংযোগ ফি পরিশোধ করুন
পল্লী বিদ্যুৎ মিটারের আবেদন ফি সর্বোচ্চ দুইবার পরিশোধ করা যায়।
আপনি চাইলে আবেদন ফি ব্যাংকের মাধ্যমে অথবা বিকাশ কিংবা রকেটের মাধ্যমে অথবা আপনি সশরীরে গিয়ে পরিশোধ করতে পারেন।
আবেদনের অবস্থা অনুসন্ধান
আপনি যদি পল্লী বিদ্যুৎ মিটার অনলাইন আবেদন করে থাকেন এবং আবেদন সংক্রান্ত কোনো সমস্যা আছে কিনা তা যাচাই করতে চান তাহলে নিচের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন এবং আপনার তথ্য দিয়ে দেখুন।
যাচাই করতে আপনি প্রথমে ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদনের মেনুবার হতে “আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা জানুন” এই অপশনটিতে ক্লিক করুন।
আপনার কাছে টাইপিং নম্বর এবং PIN নম্বরটি চাইবে ও সেটি সঠিকভাবে পূরণ করে “সাবমিট করুন” বাটনে click করুন।
এখানে আপনি আবেদনের সর্বশেষ আপডেটটি জানতে পারবেন।
FAQ
পল্লী বিদ্যুৎ মিটার আবেদন ফি কত ২০২৫?
১১৫ টাকা
পল্লী বিদ্যুৎ আবেদন করতে কি কি লাগে?
- জমির মালিকানা তথ্য
- খতিয়ান নাম্বার
- দাগ নাম্বার
- মোবাইল নাম্বার
নতুন মিটার নিতে কত টাকা লাগে?
অফিসিয়াল খরচ ১১৪৮ টাকা
পল্লী বিদ্যুতের মিটারের দাম কত?
১১৪৮ টাকা
নতুন মিটারের আবেদন করতে কি কি লাগে?
জমির মালিকানা তথ্য, খতিয়ান নাম্বার, দাগ নাম্বার, মোবাইল নাম্বার
পল্লী বিদ্যুৎ খুটির দাম কত?
প্রায় ২৯ হাজার টাকা
পল্লী বিদ্যুৎ কত টাকায় ইউনিট?
৩.৭৫ থেকে ১১.৪৬ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
ইতিকথা
আজকের আর্টিকেলে পল্লী বিদ্যুৎ মিটার অনলাইন আবেদন ২০২৫ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।যদি আপনাদের কোনো প্রশ্ন থাকে, কমেন্টে জানাতে পারেন।